যুক্তফ্রন্ট গঠন ও ৫৪-এর নির্বাচন

২১ দফা কর্মসূচি ছিলঃ-
১. বাংলাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দান।
২. বিনা ক্ষতিপূরণে সমস্ত খাজনা আদায়কারী স্বত্ব উচ্ছেদ ও রহিতকরণ এবং ভ‚মিহীন কৃষকদের মধ্যে উদ্বৃত্ত জমি বিতরণ।
৩. পাট শিল্প জাতীয়করণ। মুসলিম লীগ মন্ত্রিসভার আমলে পাট সংক্রান্ত কেলেঙ্কারির তদন্ত ও শাস্তি বিধান।
৪. কৃষির উন্নতির জন্য সমবায় কৃষি ব্যবস্থা প্রবর্তন এবং সরকারি সাহায্যে সকল প্রকার কুটির ও হস্তশিল্পের উন্নতি সাধন।
৫. লবণ তৈরির কারখানা স্থাপন। মুসলিম লীগ মন্ত্রিসভার আমলে লবণ কেলেঙ্কারির তদন্ত ও শাস্তি বিধান।
৬. শিল্প-কারিগর শ্রেণীর মোহাজেরদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা।
৭. খাল খনন ও সেচের ব্যবস্থা করে দেশকে বন্যা ও দুর্ভিক্ষের কবল হতে রক্ষা করা।
৮. শিল্প ও খাদ্যে দেশকে স্বাবলম্বী করা। আই.এল.ও-র মূলনীতি অনুযায়ী শ্রমিকদের সকল প্রকার অধিকার নিশ্চিত করা।
৯. দেশের সর্বত্র একযোগে অবৈতনিক ও বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষা প্রবর্তন।
১০. কেবল মাতৃভাষার মাধ্যমে শিক্ষাদানের ব্যবস্থা করা। সরকারি ও বেসরকারি বিদ্যালয়সমূহের মধ্যে ভেদাভেদ দূর করে একই পর্যায়ভুক্ত করা। বিশ্ববিদ্যালয়সমূহকে সরকারি সাহায্যপুষ্ট শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পরিণত করা।
১১. ঢাকা ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় আইন প্রভৃতি কালাকানুন বাতিল ও বিশ্ববিদ্যালয়সমূহকে স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে পরিণত করার ব্যবস্থা।
১২. শাসন ব্যয় হ্রাস করা। বেতনভোগীদের বেতনের মধ্যে সামঞ্জস্য বিধান। মন্ত্রীর বেতন এক হাজারের বেশি না হওয়া।
১৩. ঘুষ, দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতি বন্ধ করার লক্ষে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ।
১৪. জননিরাপত্তা আইন ও অর্ডিন্যান্স প্রভৃতি কালাকানুন রদ। বিনা বিচারে আটক বন্দিদের মুক্তি দেওয়া। সংবাদপত্র ও সভা-সমিতি করার অধিকার নিশ্চিত করা।
১৫. বিচার বিভাগকে শাসন বিভাগ থেকে পৃথক করা।
১৬. পূর্ববাংলার মুখ্যমন্ত্রীর বাসভবন বর্ধমান হাউস-কে আপাতত ছাত্রাবাস ও পরে বাংলার ভাষার গবেষণাগারে (বর্তমানে এটি বাংলা একাডেমি) পরিণত করা।
১৭. ৫২-এর ভাষা শহীদদের স্মরণে শহীদ মিনার নির্মাণ।
১৮. ২১ ফেব্রুয়ারিকে সরকারি ছুটির দিন ঘোষণা।
১৯. ১৯৪০ সালের লাহোর প্রস্তাব অনুযায়ী পূর্ববাংলাকে পূর্ণ স্বায়ত্তশাসন প্রদান। দেশরক্ষা, পররাষ্ট্র ও মুদ্রা ব্যাতীত আর সবকিছু পূর্ববাংলার সরকারের হাতে ন্যস্ত করা। আত্মরক্ষার স্বার্থে পূর্ববাংলায় অস্ত্র নির্মাণ কারখানা স্থানান্তর।
২০. যুক্তফ্রন্টের সরকার কোনো অজুহাতেই আইন পরিষদের আয়ু বাড়াবে না। আইন পরিষদের আয়ু শেষ হওয়ার ৬ মাস পূর্বে মন্ত্রিসভার পদত্যাগ এবং নির্বাচন কমিশনের মাধ্যমে স্বাধীন ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের ব্যবস্থা করা।
২১. আইন পরিষদের কোনো আসন শূন্য হলে, তিন মাসের মধ্যে উপনির্বাচন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে তা পূরণ।
  • যুক্তফ্রন্ট কবে গঠিত হয়?
  • উঃ ০৪ ডিসেম্বর, ১৯৫৩ সাল।
  • যুক্তফ্রন্ট গঠনের সিন্ধান্ত গৃহীত হয়?
  • উঃ ১৯৫৩ সালের ১৪ নভেম্বর ময়মনসিংহে আওয়ামী মুসলিম লীগের কাউন্সিল অধিবেশনে।
  • যুক্তফ্রন্ট প্রধান যে চারটি দল নিয়ে গঠিত –
  • ক. মাওলানা ভাসানীর নেতৃত্বাধীন আওয়ামী মুসলিম লীগ
    খ. শেরেবাংলা ফজলুল হকের কৃষক শ্রমিক পার্টি (কেএসপি)
    গ. মওলানা আতাহার আলীর নেজাম-ই-ইসলামী
    ঘ. হাজী দানেশের বামপন্থী গণতন্ত্রী দল
  • এ কে ফজলুল হক কৃষক শ্রমিক পার্টি (কেএসপি) গঠন কবে করেন?
  • উঃ ২৭ জুলাই, ১৯৫৩ সালে। (যুক্তফ্রন্ট গঠনের কিছুদিন আগে)
  • মাওলানা আতাহার আলী কবে নেজামে ইসলাম পার্টি গঠন করেন?
  • উঃ ১৯৫৩ সালে।
  • যুক্তফ্রন্ট সবচেয়ে বড় দল ছিল কোনটি?
  • উঃ আওয়ামী মুসলিম লীগ।
  • শেখ মুজিবুর রহমানকে কবে আওয়ামী মুসলিম লীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করা হয়?
  • ঊঃ ১৯৫৩ সালের ১৪-১৫ নভেম্বর ময়মনসিংহে কাউন্সিল অধিবেশনে।
  • যুক্তফ্রন্টের নির্বাচনী ২১ দফা ইশতেহার কবে প্রকাশিত হয়?
  • উঃ ১৯৫৩ সালের ৫ ডিসেম্বর।
  • যুক্তফ্রন্টের নির্বাচনী ইশতেহারের মুখ্য রচয়িতা কে ছিলেন?
  • উঃ আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আবুল মনসুর আহমদ।
  • ১৯৫৪ সালের সাধারণ নির্বাচনে যুক্তফ্রন্টের প্রতীক ছিল?
  • উঃ নৌকা।
  • ১৯৫৪ সালের সাধারণ নির্বাচনে যুক্তফ্রন্টের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী ছিল কোন দল?
  • উঃ তখনকার ক্ষমতাসীন মুসলিম লীগ।
  • ১৯৫৪ সালের সাধারণ নির্বাচনে মুসলিম লীগের প্রতীক কি ছিল?
  • উঃ হারিকেন।
  • ১৯৫৪ সালের সাধারণ নির্বাচনে কবে অনুষ্ঠিত হয়?
  • উঃ ০৮-১২ মার্চ, ১৯৫৪ সাল।
  • ১৯৫৪ সালের সাধারণ নির্বাচনের ফল প্রকাশ কবে? 
  • উঃ ১৯৫৪ সালের ০২ এপ্রিল।
  • ১৯৫৪ সালের সাধারণ নির্বাচনের ফলাফল কি?
  • উঃ মোট আসন ছিল ৩০৯ টি (২৩৭ টি মুসলিম, ৭২টি হিন্দু ও তফসিলি) আসনের মধ্যে যুক্তফ্রন্ট ২২৩টি আসন অর্জন করে এবং এতে ক্ষমতাসীন মুসলিম লীগ ৯ টি আসন।
  • যুক্তফ্রন্টের নেতা কে নির্বাচিত হন?
  • উঃ শেরেবাংলা এ. কে. ফজলুল হক।
  • যুক্তফ্রন্ট কবে সরকার গঠন করেন?
  • উঃ ১৯৫৪ সালের ৩ এপ্রিল এ কে ফজলুল হক, মুখ্যমন্ত্রী এবং চার সদস্যবিশিষ্ট মন্ত্রিসভা গঠন করেন।
  • যুক্তফ্রন্ট কবে পূর্ণাঙ্গ মন্ত্রীসভা গঠন করেন?
  • উঃ ১৫ মে, ১৯৫৪ সালে ১৪ সদস্য বিশিষ্ট। 
  • শেখ মুজিবুর রহমান যুক্তফ্রন্ট মন্ত্রিসভায় কোন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পেয়েছিলেন?
  • ঊঃ কৃষি, ঋণ, সমবায় ও পল্লী উন্নয়ন।
  • যুক্তফ্রন্ট সরকারের নির্বাচনী অন্যতম প্রতিশ্রুতি কি ছিল?
  • উঃ ২১ ফেব্রুয়ারি শহীদ দিবস ও ছুটি পালন, শহীদ মিনার নির্মাণ, বর্ধমান হাউসকে বাংলা একাডেমিতে রূপান্তর এবং বাস্তবায়ন করেন।
  • শেখ মুজিবুর রহমান যুক্তফ্রন্ট মন্ত্রিসভায় কোন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পেয়েছিলেন?
  • ঊঃ কৃষি, ঋণ, সমবায় ও পল্লী উন্নয়ন।
  • যুক্তফ্রন্ট মন্ত্রিসভার অর্থ- এর দায়িত্বে ছিলেন?
  • ঊঃ আবু হোসেন সরকার।
  • যুক্তফ্রন্ট মন্ত্রিসভার শিক্ষা ও রেজিস্ট্রেশন এর দায়ীত্বে ছিলেন?
  • উঃ সৈয়দ আজিজুল হক।
  • যুক্তফ্রন্ট মন্ত্রিসভার বেসামরিক সরবরাহ এর দায়িত্বে ছিলেন?
  • উঃ আতাউর রহমান খান। 
  • যুক্তফ্রন্ট মন্ত্রিসভার জনস্বাস্থ্য এর দায়িত্বে ছিলেন?
  • উঃ আবুল মনসুর আহমদ।
  • যুক্তফ্রন্ট মন্ত্রিসভার বিচার ও আইন এর দায়িত্বে ছিলেন?
  • উঃ কফিল উদ্দিন চৌধুরী।
  • যুক্তফ্রন্ট মন্ত্রিসভার শিল্প ও পূর্ত এর দায়িত্বে ছিলেন?
  • উঃ আবদুস সালাম খান।
  • যুক্তফ্রন্ট মন্ত্রিসভার রাজস্ব ও ভূমি সংস্কার এর দায়িত্বে ছিলেন?
  • উঃ আবদুল লতিফ বিশ্বাস।
  • যুক্তফ্রন্ট মন্ত্রিসভার সড়ক ও গৃহ নির্মাণ এর দায়িত্বে ছিলেন?
  • উঃ আশরাফ আলী চৌধুরী।
  • যুক্তফ্রন্ট মন্ত্রিসভার বাণিজ্য ও বিদ্যুৎ উন্নয়ন এর দায়িত্বে ছিলেন?
  • উঃ হাশিম উদ্দিন আহমদ।
  • যুক্তফ্রন্ট মন্ত্রিসভার স্বাস্থ্য ও কারা এর দায়িত্বে ছিলেন?
  • উঃ রাজ্জাকুল হায়দার চৌধুরী।
  • যুক্তফ্রন্ট মন্ত্রিসভার কৃষি, বন ও পাট এর দায়িত্বে ছিলেন?
  • উঃ ইউসুফ আলী চৌধুরী।
  • যুক্তফ্রন্ট মন্ত্রিসভার জমিদারি অধিগ্রহণ এর দায়িত্বে ছিলেন?
  • উঃ মোয়াজ্জেম উদ্দিন হোসেন।